ভোটার তালিকায় নাম তোলার নতুন নিয়ম! জেনে নিন “West Bengal SIR Documents List” সম্পর্কে সব তথ্য

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

West Bengal SIR Documents List: ২০২৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে শুরু হতে চলেছে বিশেষ সংক্ষিপ্ত পুনর্বিবেচনা (Special Summary Revision) বা সংক্ষেপে SIR প্রক্রিয়া। এই সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকায় নতুন নাম তোলা, পুরনো নাম সংশোধন, বা নাম বাদ দেওয়ার কাজ করা যাবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, এই বছর Enumeration Form বা গণনা ফর্মের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের কাজ হবে ৪ঠা নভেম্বর থেকে ৪ঠা ডিসেম্বর পর্যন্ত।

এই সময়ে যারা ভোটার হতে চান, তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো — কোন কোন নথি বা “west bengal sir documents list” জমা দিতে হবে, কখন দিতে হবে, এবং কাদের জন্য কোন নথি প্রযোজ্য। আজকের এই আর্টিকেলে সেই বিষয় নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।


গণনা ফর্ম বিতরণ ও সংগ্রহের সময়সীমা

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, ৪ঠা নভেম্বর ২০২৫ থেকে শুরু হবে গণনা ফর্ম বিতরণ ও সংগ্রহের কাজ।
এই কাজ চলবে ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত।

এই সময়ের মধ্যে প্রতিটি ভোটার নিজের এলাকায় BLO বা Booth Level Officer–এর কাছ থেকে গণনা ফর্ম (Enumeration Form) সংগ্রহ করে পূরণ করতে পারবেন। তাছাড়াও আপনারা Chief Electoral Officer,West Bengal অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পেয়ে যাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো —
👉 গণনা ফর্ম পূরণের সময় কোনো নথি জমা দিতে হবে না।
তবে, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর যদি কোনো নোটিশ জারি হয়, তখন ফর্মে উল্লেখিত যে কোনো নথির কপি জমা করতে হবে।


জন্মতারিখ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নথি (West Bengal SIR Documents List by DOB)

নির্বাচন কমিশন জন্মতারিখ অনুযায়ী তিনটি বিভাগে প্রার্থীদের ভাগ করেছে। প্রতিটি বিভাগে প্রয়োজনীয় নথি আলাদা। নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো —

🔹 ১. যারা ০১.০১.১৯৯৬ সালের আগে জন্মেছেন

এই শ্রেণির আবেদনকারীরা প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক। তাদের শুধুমাত্র জন্মতারিখের প্রমাণপত্র বা প্রমাণিত পরিচয়পত্রের যেকোনো একটি নথি জমা দিলেই চলবে।

গ্রহণযোগ্য নথি:

  • জন্ম সনদ
  • মাধ্যমিক বা সমমানের সার্টিফিকেট
  • পাসপোর্ট
  • ভোটার আইডি (যদি আগে থাকে)
  • সরকারী চাকরির নথি (যেখানে জন্মতারিখ উল্লেখ আছে)

West Bengal SIR গুরুত্বপূর্ণ তারিখ


🔹 ২. যারা ০১.০১.১৯৯৭ থেকে ০১.১২.২০০৪ সালের মধ্যে জন্মেছেন

এই শ্রেণির আবেদনকারীদের জন্মতারিখ যাচাইয়ের জন্য দুটি নথি জমা দিতে হবে
১টি নিজের জন্মতারিখের প্রমাণ,
এবং ১টি পিতা বা মাতার ভোটার তালিকার পৃষ্ঠা যেখানে তাদের নাম আছে।

গ্রহণযোগ্য নথি:

  • জন্ম সনদ / মাধ্যমিক সার্টিফিকেট / পাসপোর্ট
  • পিতা বা মাতার ভোটার তালিকার ফটোকপি
  • স্কুল ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (যদি থাকে)

🔹 ৩. যারা ০২.১২.২০০৪ সালের পরে জন্মেছেন

এই শ্রেণির আবেদনকারীরা এখনও ১৮ বছর পূর্ণ করেননি। তাদের ভোটার হওয়া যাবে না, তবে ভবিষ্যতের জন্য তাদের তথ্য রাখা হবে।
তারা যখন ১৮ বছর পূর্ণ করবেন, তখনই তাদের নাম তালিকায় যুক্ত করা হবে।


ভারতের বাইরে জন্মগ্রহণকারীরা (NRI বা বিদেশি নাগরিকের সন্তান)

যদি কোনো আবেদনকারী বিদেশে জন্মে থাকেন, কিন্তু ভারতীয় নাগরিক হন, তবে তাকে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণপত্র (Citizenship Certificate) জমা দিতে হবে।
এছাড়া, বিদেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত নাগরিকত্ব নম্বর বা নিবন্ধন নম্বর জমা দিতে হবে।


📜 নাগরিকত্ব অর্জনের নথি (Naturalization/Registration Proof)

যারা নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব নিবন্ধন নম্বরের প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক।


📁 যেসব সামাজিক তালিকা (সংক্ষিপ্ত নাম সহ) জমা দেওয়া যাবে

যদি কোনো আবেদনকারীর নিজের নামে সরকারি নথি না থাকে, তবে নিচের সামাজিক বা সরকারি তালিকায় নাম থাকা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
এগুলোকে বলা হয় Supporting Lists বা “সামাজিক নামের তালিকা”।

গ্রহণযোগ্য সামাজিক তালিকা:

  1. কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের কর্মচারী রেজিস্টার
  2. স্থানীয় পুরসভা/পঞ্চায়েত কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক তালিকা
  3. স্কুল রেকর্ড বা ছাত্রছাত্রীদের নামের তালিকা
  4. রাজ্য সরকার অনুমোদিত শরণার্থী তালিকা
  5. সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের জন্ম রেকর্ড
  6. স্থানীয় প্রশাসন বা রাজস্ব অফিসের রেজিস্টার
  7. পেনশনধারী বা সরকারি ভাতা প্রাপক তালিকা
  8. সমাজকল্যাণ বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত তালিকা
  9. তফসিলি জাতি বা উপজাতির স্বীকৃত রেকর্ড
  10. জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (NPR)
  11. ন্যাশনাল আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার বা ভোটার রোলের অংশ

SIR কমিশনের নির্ধারিত “West Bengal SIR Documents List”

নিচের নথিগুলি নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই তালিকার যেকোনো একটি নথি জমা দিলে তা ভোটার নিবন্ধনের জন্য যথেষ্ট হবে।

  1. জন্ম সনদ (Birth Certificate)
  2. পাসপোর্ট
  3. মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট
  4. রাজ্য সরকারের অফিস কর্তৃক দেওয়া বাসস্থানের শংসাপত্র
  5. ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট
  6. জাতিগত শংসাপত্র (Caste Certificate)
  7. স্থানীয় প্রশাসনের পারিবারিক রেজিস্টার
  8. জমি বা বাড়ির দলিল
  9. সরকার অনুমোদিত কর্মচারী রেকর্ড
  10. ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, LIC ইত্যাদির পুরনো নথি (যদি ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসের আগের হয়)
  11. ভোটার তালিকার পৃষ্ঠায় পিতা/মাতার নামের প্রমাণ

আধার কার্ড দেখানোর নিয়ম সম্পর্কে কমিশনের ব্যাখ্যা

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে — আধার কার্ডকে ভোটার পরিচয়পত্রের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
তবে, যদি আবেদনকারীর কাছে উপরোক্ত ১১টি নথির মধ্যে কোনোটি না থাকে, তখন তিনি আধার কার্ড দেখাতে পারেন, কিন্তু তা বাধ্যতামূলক নয়।
কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, আধারের সঙ্গে অন্য কোনো নথি থাকলে তবেই তা গ্রহণ করা যাবে।


নথি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া

  • গণনা ফর্মে যে সমস্ত তথ্য দেওয়া হবে, সেগুলি প্রথমে BLO যাচাই করবেন।
  • এরপর সংশ্লিষ্ট ERO অফিস বা নির্বাচন রেজিস্ট্রেশন অফিসার সেই তথ্য পর্যালোচনা করবেন।
  • যদি জমা দেওয়া নথিতে কোনো ভুল ধরা পড়ে, আবেদনকারীকে নোটিশ পাঠানো হবে।
  • নোটিশে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সংশোধিত বা অতিরিক্ত নথি জমা দিতে হবে।
  • সব নথি যাচাইয়ের পর নাম খসড়া ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে।

গুরুত্বপূর্ণ তারিখ এক নজরে

কার্যক্রমতারিখ
গণনা ফর্ম বিতরণ ও সংগ্রহ শুরু৪ নভেম্বর ২০২৫
গণনা ফর্ম জমার শেষ দিন৪ ডিসেম্বর ২০২৫
খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশজানুয়ারি ২০২৬ (প্রত্যাশিত)
আপত্তি বা দাবি জমার শেষ তারিখখসড়া প্রকাশের পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত

মনে রাখবেন

  • ভোটার হতে হলে আপনার বয়স ০১.০১.২০২৬ তারিখে ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
  • একাধিক জায়গায় নাম থাকলে সেটি বাতিল করা হবে।
  • মিথ্যা তথ্য দিলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়তে পারে।

উপসংহার

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার হালনাগাদ বা নতুন নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য SIR প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই সময়ে গণনা ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিলেই আপনার নাম খসড়া তালিকায় উঠবে।
তবে চূড়ান্তভাবে নাম তালিকায় রাখতে হলে নির্ধারিত “West Bengal SIR Documents List” থেকে প্রয়োজনীয় নথি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

মনে রাখবেন —
আপনার একটি ছোট পদক্ষেপই নিশ্চিত করবে আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোট দেওয়ার সুযোগ।
তাই দেরি না করে সময়মতো গণনা ফর্ম পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত রাখুন।
আপনার পরিচয়, আপনার অধিকার — আপনার ভোট!

Leave a comment