পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা হালনাগাদ এখন রাজ্যজুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচন কমিশন এবার স্পষ্ট করে জানিয়েছে, আগে থেকে যাদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে, তাদের নতুন করে সব নথি জমা দিতে হবে না। তবে কিছু নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক। আজ আমরা জানবো — কারা নথি জমা দেবেন, কারা দেবেন না, এবং ২০০২ সালের ভোটার লিস্ট ডাউনলোড ও জমা দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া।
২০০২ সালের ভোটার লিস্ট জমা দেওয়ার গুরুত্ব
নির্বাচন কমিশনের মূল উদ্দেশ্য হল ভোটার তালিকাকে আরও সঠিক ও হালনাগাদ করা। অনেক সময় দেখা যায়, ভোটার তালিকায় একই ব্যক্তির নাম বারবার রয়েছে বা মৃত ব্যক্তির নাম এখনও থেকে গেছে। আবার কেউ কেউ স্থান পরিবর্তন করলেও পুরোনো ঠিকানায় নাম রয়ে গেছে।
এই সমস্ত ভুল ঠিক করার জন্যই ২০০২ সালের ভোটার লিস্ট একটি ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। কারণ ২০০২ সালের ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি বিশ্বস্ত প্রমাণ — যেখানে পুরোনো ও বৈধ ভোটারদের নাম নথিভুক্ত আছে।
তাই যাদের নাম ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে আগে থেকেই আছে, তারা আলাদা করে নতুন প্রমাণপত্র জমা না দিয়েও তাদের নাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৈধ হিসেবে গণ্য করতে পারবেন।
কমিশনের নতুন নির্দেশিকা কী বলছে
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে —
👉 যাদের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় রয়েছে, তাদের আর নতুন করে ১১টি নথির মধ্যে কোনোটি জমা দিতে হবে না।
👉 কেবলমাত্র ২০০২ সালের ভোটার লিস্টের একটি প্রিন্ট কপি, যেখানে আপনার নাম স্পষ্টভাবে দেখা যাবে, সেটি জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট BLO (Booth Level Officer)-এর কাছে।
👉 তবে যাদের নাম সেই তালিকায় নেই, তাদের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য ১১টি নথির মধ্যে যেকোনো একটি নথি জমা দিতে হবে।
Special Intensive Revision of Electoral Roll 2026
যাদের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় আছে, তারা কী করবেন?
আপনার যদি মনে হয়, আপনার নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় আছে, তাহলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন 👇
ধাপ ১: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান
👉 https://ceowestbengal.wb.gov.in
এটি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (CEO West Bengal) অফিসিয়াল ওয়েবসাইট।
ধাপ ২: “Voter List” বা “Final Roll” অপশন নির্বাচন করুন
ওয়েবসাইটের হোমপেজে গেলে আপনি “Final Roll / Draft Roll Download” নামে একটি অপশন পাবেন। সেখানে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩: আপনার জেলা (District) ও বিধানসভা কেন্দ্র (Assembly Constituency) নির্বাচন করুন
একটি ড্রপডাউন মেনু থেকে আপনার জেলা ও AC নম্বর নির্বাচন করুন।
উদাহরণ:
- District: North 24 Parganas
- Assembly: Barasat
ধাপ ৪: বুথ (Polling Station) নির্বাচন করুন
এখন আপনার বুথ বা ভোটকেন্দ্রের নাম নির্বাচন করুন।
ধাপ ৫: Final Roll ডাউনলোড করুন
এখন আপনি “Final Roll PDF Download” বোতামে ক্লিক করে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার PDF ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
ধাপ ৬: আপনার নাম খুঁজে বের করুন
PDF ফাইলে আপনার নাম, বয়স, ঠিকানা এবং ভোটার নম্বর খুঁজে বের করুন। নাম পাওয়া গেলে সেই পৃষ্ঠার প্রিন্ট নিন।
ধাপ ৭: BLO-র কাছে জমা দিন
এই প্রিন্ট কপি BLO অফিসে বা নির্ধারিত বুথে জমা দিন। এর মাধ্যমেই আপনার পুরনো ভোটার আইডি বৈধ হিসেবে থেকে যাবে।
নতুন ওয়েবসাইটে ২০০২ সালের ভোটার লিস্ট প্রকাশ
যাদের নাম নেই ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে, তাদের কী জমা দিতে হবে?
যাদের নাম ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে নেই, তাদের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য কমিশন ১১টি নথির মধ্যে যেকোনো একটি জমা দিতে বলেছে। নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো 👇
| 📘 নথির নাম | 📖 বিবরণ |
|---|---|
| জন্ম সনদপত্র (Birth Certificate) | সরকার অনুমোদিত জন্ম রেজিস্ট্রার অফিস থেকে প্রাপ্ত জন্মের সরকারি প্রমাণপত্র। |
| পাসপোর্ট (Passport) | কেন্দ্র সরকারের আন্তর্জাতিক পরিচয়পত্র, নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবেও গ্রহণযোগ্য। |
| মাধ্যমিক বা তার উপরের কোনো শিক্ষাগত সনদপত্র | মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্রও প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। |
| সরকারি বাসস্থানের শংসাপত্র | কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের অনুমোদিত বাসস্থান সম্পর্কিত নথি। |
| ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট (Forest Right Certificate) | বনাঞ্চলে বসবাসকারীদের জমির অধিকার প্রমাণপত্র। |
| জাতীয় শংসাপত্র (Nationality Certificate) | স্থানীয় প্রশাসন বা আদালতের দেওয়া নাগরিকত্বের প্রমাণ। |
| নাগরিক বা পারিবারিক রেজিস্টার | পঞ্চায়েত বা পৌরসভার নথিতে পরিবারের নাম থাকলে সেটিও প্রমাণ। |
| জমি বা বাড়ির দলিল (Land/House Deed) | আপনার জমি বা বাড়ির বৈধ দলিল। |
| ব্যাংক/পোস্ট অফিস/সরকারি নথি (Before July 1987) | ১৯৮৭ সালের জুলাই মাসের আগের কোনো সরকারি রেকর্ড। |
| সরকারি চাকরির প্রমাণপত্র | কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের অধীনে কর্মরতদের অফিসিয়াল প্রমাণ। |
| পেনশন প্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর প্রমাণপত্র | পেনশনধারী কর্মচারীর বৈধ কাগজপত্র। |
BLO-র ভূমিকা (Role of BLO)
BLO বা Booth Level Officer হলেন স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তারা।
তাদের দায়িত্ব হল —
- এলাকাভিত্তিক ভোটার তালিকা যাচাই করা
- পুরনো ও নতুন নাম সঠিকভাবে মিলিয়ে দেখা
- নথি গ্রহণ ও যাচাই করা
- ভোটার তালিকার আপডেট রেকর্ড রাখা
তাই আপনার নথি ও তথ্য জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে BLO-র সঙ্গে যোগাযোগ করলেই সবচেয়ে ভালো হয়। BLO আপনার নথি যাচাই করে সঠিকভাবে তা নির্বাচন অফিসে পাঠিয়ে দেবেন।
অনলাইনে ভোটার লিস্ট চেক করার সুবিধা
বর্তমানে আপনি ঘরে বসেই আপনার নাম ভোটার তালিকায় আছে কিনা চেক করতে পারেন।
ধাপগুলো হলো 👇
1️⃣ https://electoralsearch.eci.gov.in-এ যান
2️⃣ “Search by Details” বা “Search by EPIC number” নির্বাচন করুন
3️⃣ নাম, জন্মতারিখ বা EPIC নম্বর দিয়ে সার্চ করুন
4️⃣ আপনার নাম দেখা গেলে বুঝবেন আপনি ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকায় আছেন
গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়
- যাদের নাম ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে নেই, তারা যেন সময়মতো নথি জমা দেন
- সব নথি অবশ্যই স্পষ্ট ও বৈধ হতে হবে
- ভুল বা নকল নথি দিলে নাম বাতিল হতে পারে
- BLO-র দেওয়া নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নথি জমা দিতে হবে
- ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় সচেতনতা বজায় রাখা প্রয়োজন
উদ্দেশ্য ও উপকারিতা
২০০২ সালের ভোটার লিস্ট জমা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হল —
- ভোটার তালিকা থেকে নকল বা মৃত নাম বাদ দেওয়া
- প্রকৃত নাগরিকদের নাম বজায় রাখা
- প্রতারণা রোধ করা
- ভোটাধিকারের অধিকার সংরক্ষণ করা
এর ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও সঠিক হবে।
উপসংহার
নির্বাচন কমিশন এবার খুবই স্পষ্টভাবে জানিয়েছে —
👉 “যাদের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় আছে, তাদের আর নতুন নথি লাগবে না।”
এটি সাধারণ ভোটারদের জন্য এক বড় স্বস্তির খবর।
শুধু ওয়েবসাইট থেকে ২০০২ সালের ভোটার লিস্ট ডাউনলোড করে নিজের নামসহ প্রিন্ট কপি BLO অফিসে জমা দিলেই যথেষ্ট।
এভাবে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে, অন্যদিকে নাগরিক তথ্যও পরিষ্কারভাবে সংরক্ষিত থাকবে।
অতএব, আপনি যদি পুরনো ভোটার হন, তাহলে দেরি না করে এখনই আপনার নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকা থেকে ডাউনলোড করুন ও জমা দিন।
ভোটার তালিকায় আপনার নাম থাকা মানেই আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার অটুট থাকা!