পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন এক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া — West Bengal SIR (Special Identification Revision) বা বিশেষ নির্দিষ্ট সংশোধন কর্মসূচি ২০২৬।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজ্যের সমস্ত ভোটার তালিকা পুনরায় যাচাই করা হবে, পুরনো বা ভুল নাম বাদ দেওয়া হবে এবং বৈধ নাগরিকদের নাম সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো— রাজ্যের ভোটার তালিকা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নির্ভুল করা।
আজ আমরা জানব “west bengal sir গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও অন্যান্য সমস্ত তথ্য” সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
West Bengal SIR গুরুত্বপূর্ণ তারিখসমূহ
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষণামতে, ভোটার তালিকা সংশোধনের নির্দিষ্ট সময়সূচি নিম্নরূপ—
| কার্যক্রম | শুরু তারিখ | শেষ তারিখ |
|---|---|---|
| বাড়ি বাড়ি গণনা পর্ব | ৪ নভেম্বর ২০২৫ | ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ |
| খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ | ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | — |
| দাবি ও আপত্তির সময়সীমা | ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২ জানুয়ারি ২০২৬ |
| নোটিফিকেশন, যাচাই ও মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া | ৩ জানুয়ারি ২০২৬ | ২০ জানুয়ারি ২০২৬ |
| চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৬ | — |
এই তারিখগুলির মধ্যে প্রতিটি পর্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO) প্রত্যেক ভোটারের বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই করবেন।
West Bengal SIRবা Special Identification Revision কী?
SIR হলো বিশেষ নির্দিষ্ট ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে প্রতিটি ভোটারের নাগরিকত্ব, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করা হবে।
এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন রাজ্যের প্রত্যেক ভোটারের কাছে নতুন Enumeration Form বা গণনার ফর্ম পাঠাবে।
এই ফর্মের মাধ্যমে ভোটারদের নিজেদের পরিচয়, ঠিকানা ও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য হালনাগাদ করতে হবে।
যাঁদের নাম পুরনো ভোটার লিস্টে রয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের কাছে এই ফর্ম পৌঁছে যাবে।
এনুমারেশন ফর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত
এনুমারেশন ফর্ম বা গণনার ফর্ম হলো একটি বিশেষ নথি যা প্রতিটি ভোটারকে দেওয়া হবে BLO (Booth Level Officer)-এর মাধ্যমে।
এই ফর্মে ভোটারের অধিকাংশ তথ্য আগে থেকেই ছাপা থাকবে, যেমন—
- EPIC নম্বর
- নাম
- ঠিকানা
- জন্মতারিখ
- লিঙ্গ
- নির্বাচনী এলাকা
প্রত্যেক ভোটারের জন্য দুটি ফর্ম ছাপা হবে।
একটি ফর্ম ভোটারের কাছে থাকবে, এবং অপরটি BLO নিয়ে যাবেন যাচাইয়ের জন্য।
👉 ফর্মে প্রায় ৯০% তথ্য আগেই ছাপা থাকবে, শুধু বাকি অংশে ভোটারকে নিজের স্বাক্ষর ও প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত করতে হবে।
কারা পাবেন এই ফর্ম?
- যাঁদের নাম ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকায় আছে।
- যাঁরা রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা এবং ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত।
- যাঁরা ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী।
পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে প্রায় ৭.৬৫ কোটি ভোটার রয়েছেন।
তাই কমিশন প্রায় ১৫ কোটির বেশি এনুমারেশন ফর্ম ছাপাবে, যাতে প্রত্যেক ভোটার দুটি করে ফর্ম পান।
প্রকাশিত হল ২০০২ সালের ভোটার লিস্ট
West Bengal SIR নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় ১১টি নথি
কমিশনের নির্দিষ্ট নির্দেশ অনুসারে, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য নিম্নলিখিত ১১টি নথির (Documents) যেকোনও একটি ব্যবহার করা যাবে ⬇️
1️⃣ কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের কর্মী অথবা পেনশনভোগী পরিচয়পত্র।
2️⃣ ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে ব্যাংক, পোস্ট অফিস, LIC বা প্রশাসনের দেওয়া সরকারি নথি।
3️⃣ জন্ম শংসাপত্র (Birth Certificate)।
4️⃣ পাসপোর্ট (Passport)।
5️⃣ মাধ্যমিক বা তার অধিক শিক্ষাগত শংসাপত্র।
6️⃣ রাজ্য সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া বাসস্থানের শংসাপত্র।
7️⃣ ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট (Forest Rights Certificate)।
8️⃣ জাতিগত শংসাপত্র (Caste Certificate)।
9️⃣ ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অফ সিটিজেনস (NRC)-এর কোনও নথি।
10️⃣ স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া পারিবারিক রেজিস্টার।
11️⃣ জমি বা বাড়ির দলিল (Land/Property Document)।
এই নথিগুলির মধ্যে যেকোনও একটি জমা দিলেই নাগরিকত্ব প্রমাণ করা যাবে।
কাদের নাম বাদ যেতে পারে ভোটার তালিকা থেকে?
নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, নিচের ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে যদি তাঁরা নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন ⬇️
1️⃣ যাঁদের পরিবারের কারও নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নেই এবং নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারেননি।
2️⃣ মৃত ভোটারদের নাম।
3️⃣ ভুয়ো তথ্য বা জাল নথি দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলা ব্যক্তিদের নাম।
4️⃣ যাঁরা অন্য রাজ্য বা জেলায় চলে গেছেন।
5️⃣ যাঁদের দুটি EPIC নম্বর আছে — তাঁদের একটি নাম বাদ দেওয়া হবে।
6️⃣ বিদেশি অনুপ্রবেশকারীরা (বিশেষত বাংলাদেশ বা মায়ানমার থেকে আসা), যাঁরা অবৈধভাবে নাম তুলেছেন।
কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে —
“যদি কেউ এই ১১টি নথির মধ্যে কোনওটি জালভাবে তৈরি করতেও পারেন, তাঁরা ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে তাঁদের পিতা-মাতার নাম দেখাতে পারবেন না।
সেক্ষেত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এবং নাম বাদ যাবে।”
কত নাম বাদ পড়তে পারে?
অফিসিয়ালভাবে কমিশন কোনও সংখ্যা ঘোষণা করেনি, তবে কর্মকর্তাদের অনুমান অনুযায়ী—
প্রায় ১ কোটির কাছাকাছি নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে।
এর মধ্যে থাকতে পারে —
- মৃত ভোটারদের নাম,
- স্থানান্তরিত নাগরিকদের নাম,
- অবৈধ বা জাল ভোটারদের নাম।
👉 হিসাব অনুযায়ী, ২০০২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৭৫ লক্ষের মতো নাম স্থানান্তর বা মৃত্যুর কারণে বাদ পড়েছে।
👉 সেই সঙ্গে যদি ভুয়ো ভোটারদের সংখ্যা যোগ করা হয়, তবে মোট বাদ পড়া নাম ১ কোটিরও বেশি হতে পারে।
তবে কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী—
“এই অনুমান সম্পূর্ণ অস্থায়ী।
চূড়ান্ত তথ্য জানানো হবে শুধুমাত্র Final Voter List প্রকাশের পর।”
BLO-দের ভূমিকা
BLO বা Booth Level Officer এই প্রক্রিয়ার মূল দায়িত্বে থাকবেন।
তাঁরা প্রতিটি ভোটারের বাড়িতে গিয়ে—
- এনুমারেশন ফর্ম বিতরণ করবেন,
- ভোটারের তথ্য যাচাই করবেন,
- ফর্ম সংগ্রহ করবেন,
- নথি যাচাই করে ভোটার তালিকা আপডেট করবেন।
সাধারণ ভোটারদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ
1️⃣ ভোটারকে অবশ্যই BLO-এর কাছে নিজের সঠিক তথ্য দিতে হবে।
2️⃣ ফর্ম পূরণ করার আগে সব তথ্য ভালোভাবে মিলিয়ে নিন।
3️⃣ নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য অন্তত একটি বৈধ নথি জমা দিন।
4️⃣ যদি আপনার নাম ভোটার তালিকায় না থাকে, তাহলে দাবি বা আপত্তি সময়ের মধ্যে নতুনভাবে আবেদন করুন।
5️⃣ ভুল তথ্য দিলে বা নথি জাল হলে নাম বাদ যেতে পারে।
অনলাইন তথ্য জানার উপায়
পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা বা SIR সম্পর্কিত সমস্ত আপডেট পাওয়া যাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে:
🔗 https://ceowestbengal.nic.in/
এছাড়াও, অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলোতেও নিয়মিত তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে—
- Facebook: @CEOWestBengal
- X (Twitter): @ceo_wb
- YouTube: CEO West Bengal Channel
উপসংহার
“West Bengal SIR গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও অন্যান্য সমস্ত তথ্য” জানাটা এখন প্রতিটি ভোটারের দায়িত্ব।
এই বিশেষ নির্দিষ্ট সংশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন রাজ্যের ভোটার তালিকা একেবারে হালনাগাদ করতে চলেছে।
যাঁরা প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক, তাঁদের চিন্তার কিছু নেই।
কিন্তু যাঁদের নাম পুরনো বা ভুয়ো তথ্যের ভিত্তিতে তোলা হয়েছে, তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে মুছে যাবে।
👉 তাই এখনই প্রস্তুতি নিন —
আপনার নাগরিকত্বের নথি প্রস্তুত রাখুন,
BLO-এর ফর্ম ঠিকভাবে পূরণ করুন,
আর ভোটার তালিকায় নিজের নাম যাচাই করুন।
এটাই সময় নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণের,
এবং দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গর্বিতভাবে ভোটার হিসেবে নিজের নাম ধরে রাখার।