পশ্চিমবঙ্গ সরকার বরাবরই রাজ্যের সাধারণ মানুষের আর্থিক সুরক্ষার দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় “Old Age Pension Scheme” বা বার্ধক্য ভাতা প্রকল্প বহু বছর ধরে রাজ্যের প্রবীণ নাগরিকদের পাশে থেকেছে। বর্তমানে এই প্রকল্পের আওতায় ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষ মাসে ₹১০০০ টাকা করে পান। এবার কেন্দ্র সরকারের নতুন নির্দেশে এই ভাতা ₹১৫০০ টাকা করার প্রস্তাব এসেছে।
এতে লক্ষাধিক প্রবীণ নাগরিকের মুখে আবারও হাসি ফুটেছে। সরকারের এই পদক্ষেপ বার্ধক্যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এক বড় পদক্ষেপ হতে পারে।
উদ্দেশ্য
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের সেই প্রবীণ নাগরিকদের আর্থিকভাবে সাহায্য করা, যাদের আর কোনো উপার্জনের উৎস নেই।
“Old Age Pension Scheme”-এর মাধ্যমে প্রবীণরা মাসিক ভাতা পেয়ে জীবনের শেষ সময়টুকু সম্মানের সঙ্গে কাটাতে পারেন। এই সাহায্য সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ Social Security Scheme, যা প্রবীণদের আর্থিক স্বনির্ভরতা ও মানসিক নিশ্চিন্ততা প্রদান করে।
Old Age Pension Scheme কী?
Old Age Pension Scheme বা বার্ধক্য ভাতা প্রকল্প হলো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প, যার মাধ্যমে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষদের মাসিক ভাতা প্রদান করা হয়।
এই প্রকল্পের অধীনে —
- ৬০ বছর থেকে ৭৯ বছর বয়সী প্রবীণদের মাসে ₹১০০০ টাকা,
- আর ৮০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণদেরও একই হারে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়।
এখন কেন্দ্র সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী এই পরিমাণ ₹১৫০০ টাকা করা হতে পারে।
Old Age Pension Scheme Payment increase — কী পরিবর্তন হচ্ছে?
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণ নাগরিকরা মাসিক ₹১০০০ টাকা করে পাচ্ছেন। কেন্দ্র সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী এই অঙ্ক বাড়িয়ে ₹১৫০০ করা হতে পারে।
🔹 বর্তমান ভাতা: ₹১০০০ টাকা
🔹 নতুন প্রস্তাবিত ভাতা: ₹১৫০০ টাকা
🔹 বৃদ্ধির অঙ্ক: ₹৫০০ টাকা
এর ফলে যারা আগে ১০০০ টাকা পেতেন, তারা অতিরিক্ত ৫০০ টাকা বেশি পাবেন।
এই পদক্ষেপ লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের মতোই রাজ্যের প্রবীণদের জন্য বড় উপহার হয়ে উঠতে পারে।
Old Age Pension West Bengal Application Form PDF
কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ
কেন্দ্র সরকার বর্তমানে জাতীয় সমাজ সুরক্ষা প্রকল্প (National Social Assistance Programme – NSAP)-এর অধীনে ৬০ থেকে ৭৯ বছর বয়সীদের ₹২০০ টাকা এবং ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের ₹৫০০ টাকা দেয়।
রাজ্য সরকার সেই টাকার সঙ্গে নিজের অংশ যোগ করে মোট ₹১০০০ টাকা করে দেয়।
এখন কেন্দ্র সরকার তাদের অংশ বাড়িয়ে ₹৬০০ টাকা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে কেন্দ্রের অংশ হবে মোট টাকার প্রায় ৬০% (₹৩৬০) এবং বাকি অংশ রাজ্য সরকার দেবে।
রাজ্যের অবদান ও আর্থিক দিক
পশ্চিমবঙ্গ সরকার বর্তমানে প্রায় ২১ লক্ষ প্রবীণ নাগরিককে এই বার্ধক্য পেনশন দিচ্ছে। এছাড়াও জয় বাংলা প্রকল্প-এর মাধ্যমে আরও এক কোটির বেশি মানুষ মাসে ₹১০০০ টাকা করে সাহায্য পান।
সব মিলিয়ে রাজ্যের এই প্রকল্পে বার্ষিক ব্যয় প্রায় ₹১২,০০০ কোটি টাকা।
যদি ভাতা ₹১৫০০ করা হয়, তবে রাজ্যের ব্যয় আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। তাই কেন্দ্র-রাজ্য উভয়ের আর্থিক সমন্বয় প্রয়োজন হবে।
সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় প্রভাব
এই ভাতা বৃদ্ধির ফলে প্রবীণ নাগরিকদের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হবে।
- তাঁদের খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে সুবিধা হবে।
- একাকী থাকা প্রবীণদের জীবনমান উন্নত হবে।
- সমাজে তাদের প্রতি সম্মান ও নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি পাবে।
এই প্রকল্প শুধুমাত্র আর্থিক সাহায্য নয়, এটি প্রবীণ নাগরিকদের সমাজে মর্যাদা রক্ষার একটি প্রতীক।
কখন থেকে এই বৃদ্ধি কার্যকর হতে পারে?
কেন্দ্র সরকার এই পরিবর্তন ২০২৬ অর্থবর্ষ থেকে কার্যকর করার প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে এর আগে রাজ্য সরকারকে তাদের নিজস্ব অংশ বৃদ্ধি করতে হবে।
রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে আলোচনার পর চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে।
Old Age Pension Scheme অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া
যারা এখনও এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করেননি, তারা অনলাইনে আবেদন করতে পারেন।
- ধাপ ১: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান
- ধাপ ২: “Apply Online” অপশন নির্বাচন করুন
- “Old Age Pension” বা “বার্ধক্য ভাতা” অপশনটি নির্বাচন করুন।
- ধাপ ৩: প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন
- নাম
- জন্মতারিখ
- ঠিকানা
- ভোটার আইডি / আধার কার্ড নম্বর
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ
- ধাপ ৪: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন
- আধার কার্ড
- ভোটার কার্ড
- বয়সের প্রমাণপত্র
- ব্যাংক পাসবুকের কপি
- পাসপোর্ট সাইজ ফটো
- ধাপ ৫: আবেদন জমা দিন
- সঠিক তথ্য যাচাই করে আবেদনটি সাবমিট করুন।
- ধাপ ৬: আবেদন স্ট্যাটাস চেক করুন
- ওয়েবসাইটে গিয়ে “Track Application Status” অপশনে ক্লিক করে আপনার আবেদন নম্বর দিয়ে স্ট্যাটাস দেখতে পারেন।
Old Age Pension / Jai Bangla পেনশন অনলাইন স্ট্যাটাস চেক
আপনি সহজেই নিজের Old Age Pension / Jai Bangla (Joy Bangla) পেনশন-এর আবেদন বা পেমেন্ট স্ট্যাটাস অনলাইনে চেক করতে পারবেন। প্রধান পদ্ধতি হলো জয় বাংলা (Jai Bangla) পোর্টাল, জাতীয় ট্র্যাকার (NSAP), UMANG অ্যাপ এবং SMS পদ্ধতি।
প্রাসঙ্গিক তথ্য/নথি হাতে রাখুন
Old Age Pension Status চেক করার আগে এগুলো পাশে রাখুন:
- Beneficiary ID / Application ID (যদি পান),
- Aadhaar নম্বর (যদি রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন),
- রেজিস্টার করা মোবাইল নম্বর,
- আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর বা অন্য প্রমাণ যদি লাগবে।
1) সবচেয়ে সহজ ও প্রথম পদ্ধতি — Jai Bangla (জয় বাংলা) পোর্টাল দিয়ে চেক
- কোনো ব্রাউজার খুলে Jai Bangla অফিসিয়াল পোর্টাল-এ যান।
- হোমপেজে “Track Applicant / View Payment Status” বা অনুরূপ অপশন খুঁজুন।
- সেখানে দিতে পারেন — Beneficiary ID / Aadhaar No / Mobile No — যেকোনো একটি।
- Captcha / ভেরিফিকেশন দিন।
- Search / Track চাপুন — আপনার আবেদন/পেমেন্ট স্ট্যাটাস স্ক্রিনে আসবে (Pending / Approved / Payment processed ইত্যাদি)।
(নোটঃ পশ্চিমবঙ্গের একক পেনশন পোর্টাল “Jai Bangla” -এর মাধ্যমে বিভিন্ন পেনশন ক্যাটাগরি এক জায়গায় ট্র্যাক করা যায়।)
2) জাতীয় পর্যায়ের ট্র্যাকার (NSAP) — যদি আবেদন NSAP-এ করা থাকে
- NSAP Application Tracker পেজ ওপেন করুন (National Social Assistance Programme)।
- আপনার Application Number অথবা Registered Mobile দিয়ে অনুসন্ধান করুন।
- প্রয়োজনীয় Captcha/কোড পূরণ করে স্ট্যাটাস দেখুন।
(এই জাতীয় ট্র্যাকারটি বিশেষ করে কেন্দ্রীয় এনএসএপি-ভিত্তিক আবেদনগুলো ট্র্যাক করতে ব্যবহৃত হয়।)
3) UMANG অ্যাপ বা Social Security Pension Portal (মোবাইল থেকে)
- আপনার মোবাইলে UMANG অ্যাপ ইনস্টল করে খুলুন বা ওয়েব থেকে Social Security Pension Portal খুলুন।
- সেখানে Old Age Pension / Social Security Pension মডিউল খুঁজুন।
- Login / Search অপশনে Beneficiary ID/Aadhaar/Registered Mobile দিয়ে স্ট্যাটাস দেখুন।
(UMANG-এর মাধ্যমে সরকারি সেবার একাধিক কাজ মোবাইল থেকে করা যায় — স্ট্যাটাস চেকও সহজ।)
4) SMS এর মাধ্যমে স্ট্যাটাস চেক (যদি সার্ভিস সক্রিয় থাকে)
অনেকে অনলাইন না পারলে SMS-এও স্ট্যাটাস জানতে পারেন — কিছু সূত্রে SMS নম্বর ও ফরম্যাট দেখানো আছে। উদাহরণ ফরম্যাট:
- SMS পাঠান 9002481874-এ:
WBEPEN <space> USERID(Registered mobile থেকে পাঠাতে হবে)। - কিছুক্ষণের মধ্যে reply পাবেন। (নির্দিষ্ট ফরম্যাট/নম্বর জেলার ভিত্তিতে আলাদা হতে পারে; তাই আগে স্থানীয় তথ্য যাচাই করুন)।
(নোটঃ SMS সার্ভিস সব জেলায় একইভাবে কাজ নাও করতে পারে — অফিসিয়াল পোর্টালে দেওয়া নির্দেশ/হেল্পলাইন চেক করুন)।
5) অফলাইন হেল্পলাইন / জেলাশাসক অফিসে যোগাযোগ (যদি অনলাইন না মিলছে)
- পশ্চিমবঙ্গের Department of Women & Child Development and Social Welfare বা জেলা প্রশাসন/পঞ্চায়েত অফিসে যোগাযোগ করুন।
যোগ্যতার মানদণ্ড
Old Age Pension Scheme-এর জন্য আবেদন করতে হলে নিচের শর্তগুলি পূরণ করতে হবে —
- আবেদনকারীর বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
- আবেদনকারী পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- মাসিক আয় দারিদ্র্যসীমার নিচে হতে হবে।
- অন্য কোনো সরকারি পেনশন পাওয়া যাবে না।
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যক।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
আবেদনের সময় নিচের নথিগুলি লাগবে —
- আধার কার্ড
- ভোটার আইডি
- জন্মসনদ বা বয়স প্রমাণপত্র
- ব্যাংক পাসবুকের ফটোকপি
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- বাসস্থানের প্রমাণ
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কেন্দ্র সরকার খুব শীঘ্রই রাজ্যগুলির সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করবে, যেখানে টপ-আপ অর্থাৎ অতিরিক্ত অর্থের পরিমাণ নিয়ে আলোচনা হবে।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পশ্চিমবঙ্গের আরও বহু প্রবীণ নাগরিকের মুখে হাসি ফুটবে। তবে রাজ্য সরকারকে তার বাজেট অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজাতে হবে, যাতে অর্থনৈতিক চাপ সামাল দেওয়া যায়।
অন্যান্য সম্পর্কিত প্রকল্প
পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রবীণদের জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চালু করেছে —
- জয় বাংলা প্রকল্প
- বিধবা ভাতা
- প্রতিবন্ধী ভাতা
- লক্ষ্মীর ভান্ডার স্কিম
এই সব প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো সমাজের প্রত্যেকটি প্রান্তের মানুষকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা।
উপসংহার
“Old Age Pension Scheme Payment increase” শুধুমাত্র একটি সংখ্যার পরিবর্তন নয়, এটি প্রবীণদের জীবনের মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তার প্রতীক।
যদি এই ভাতা সত্যিই ₹১০০০ থেকে ₹১৫০০ করা হয়, তবে এটি হবে এক বড় মানবিক পদক্ষেপ।
প্রবীণ নাগরিকরা নিজেদের জীবনের শেষ সময়টুকু একটু স্বস্তিতে কাটাতে পারবেন।
রাজ্য ও কেন্দ্র উভয়ের সমন্বয়ে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও মজবুত হবে।