বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্প (Beti Bachao Beti Padhao Prakalpa) হল ভারতের সরকার চালু করা একটি বিশেষ উদ্যোগ। 2015 সালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এটি শুরু করেন। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল মেয়েদের সুরক্ষা, শিক্ষা এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। বিশেষ করে যেখানে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় কম, সেই অঞ্চলে এই প্রকল্প অত্যন্ত কার্যকরী।
বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্প কী?
‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ শব্দগুলির মানে হল মেয়েদের রক্ষা করা এবং তাদের শিক্ষিত করা। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মেয়েদের প্রতি বৈষম্য এবং অবহেলা এখনও দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা জন্মানোর আগেই গর্ভপাতের শিকার হয়।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই ধরণের সমস্যার সমাধান করা হয়। এছাড়াও, মেয়েদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব বাড়াতে এবং তাদের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করাই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য।
বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পের উদ্দেশ্য
১. মেয়েদের জন্মহার বাড়ানো।
২. মেয়েদের প্রতি বৈষম্য দূর করা।
৩. মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো।
৪. নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো।
৫. মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
৬. পিতা-মাতার মধ্যে মেয়েদের পড়াশোনা করানোর গুরুত্ব বোঝানো।
প্রকল্পের যোগ্যতা (Eligibility Criteria)
এই প্রকল্পে যেকোনো পরিবার অংশগ্রহণ করতে পারে, তবে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে:
১. কন্যা সন্তান থাকতে হবে।
২. মেয়েটির বয়স 10 বছরের কম হতে হবে।
৩. পরিবারটি ভারতের নাগরিক হতে হবে।
৪. মেয়েটির জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পের সুবিধা (Benefits)
- মেয়েদের নিরাপত্তা: মেয়েদের জন্ম থেকে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়।
- শিক্ষার জন্য সহায়তা: মেয়েদের পড়াশোনার জন্য অর্থসাহায্য প্রদান করা হয়।
- সমাজে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি: মেয়েদের সমানাধিকার এবং আত্মনির্ভরতা বাড়ে।
- স্বাস্থ্য পরিষেবা: মেয়েদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
- আর্থিক সহায়তা: মেয়েদের শিক্ষার জন্য আলাদা ফান্ড তৈরি করা হয়।
প্রয়োজনীয় নথি (Documents Required)
১. পিতা-মাতার পরিচয়পত্র।
২. মেয়েটির জন্ম শংসাপত্র।
৩. ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ।
৪. পরিবারটির আয়ের শংসাপত্র।
৫. মেয়েটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নথি।
৬. আধার কার্ড।
বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও (BBBP) স্কিমের জন্য আবেদন করার পদ্ধতি
বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও (BBBP) প্রকল্পের অধীনে সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট (SSA) খুলে আপনি সরাসরি স্কিমের সুবিধাগুলি পেতে পারেন। আবেদন প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ এবং সাধারণ। নীচে ধাপে ধাপে আবেদন করার প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে:
- ধাপ ১: মনোনীত ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে যান
- প্রথমে সেই ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে যান যেটি BBBP প্রকল্পের অধীনে সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা প্রদান করে। সাধারণত, সমস্ত প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিস এই সুবিধাটি প্রদান করে।
- ধাপ ২: আবেদনপত্র সংগ্রহ করুন এবং পূরণ করুন
- নির্ধারিত ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করুন।
- ফর্মটি ভালোভাবে পড়ুন এবং সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করুন।
- এটি ম্যানুয়ালি পূরণ করতে হয়, তাই কোনো তথ্য ভুল না হয় তা নিশ্চিত করুন।
- ধাপ ৩: প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করুন
- আবেদনপত্রের সাথে নির্ধারিত নথি জমা দিতে হবে। এই নথিগুলি হল:
- কন্যা সন্তানের জন্ম শংসাপত্র।
- পিতা-মাতার পরিচয়ের প্রমাণ (যেমন: আধার কার্ড, ভোটার কার্ড)।
- ঠিকানার প্রমাণ (যেমন: রেশন কার্ড, গ্যাস কানেকশন বিল)।
- পাসপোর্ট আকারের ছবি।
- অন্য প্রয়োজনীয় নথি (ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের নির্দেশিকা অনুসারে)।
- আবেদনপত্রের সাথে নির্ধারিত নথি জমা দিতে হবে। এই নথিগুলি হল:
- ধাপ ৪: নথি জমা দিন এবং অ্যাকাউন্ট খুলুন
- আবেদনপত্রটি সঠিকভাবে পূরণ করার পরে সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত করুন।
- ফর্ম এবং নথি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে জমা দিন।
- কন্যা সন্তানের নামে একটি সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট (SSA) খুলুন।
- অ্যাকাউন্ট খুলে প্রাথমিক জমার অর্থ জমা করুন।
অ্যাকাউন্ট স্থানান্তর (Transfer Facility)
আপনার সুবিধার জন্য সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্টটি এক ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করা যেতে পারে। এটি সহজ এবং ঝামেলামুক্ত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা
- সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্টে বছরে ন্যূনতম 250 টাকা জমা করতে হবে।
- মেয়েটির বয়স 21 বছর না হওয়া পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রাখতে হবে।
- এই প্রকল্পে সুদের হার সরকারের দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং এটি খুবই লাভজনক।
উপসংহার
বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্প শুধুমাত্র একটি সরকারি প্রকল্প নয়। এটি একটি সামাজিক দায়িত্বের প্রতীক। মেয়েদের প্রতি বৈষম্য কমাতে এবং তাদের জীবনের মান উন্নত করতে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি সবাই এগিয়ে আসি, তবে প্রকল্পটি আরও বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারবে। মেয়েদের সুরক্ষা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত।