ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন (Voter Card Verification) না করলে বাদ পড়তে পারেন ভোটার তালিকা থেকে! এবারই জানুন নতুন নিয়ম, প্রক্রিয়া ও দরকারি নথির তালিকা!

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন (Voter Card Verification) হলো ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) কর্তৃক চালু করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ভোটার তালিকাকে আরও স্বচ্ছ এবং নির্ভুল করা হচ্ছে। এই নতুন নিয়মের অধীনে, প্রত্যেক ভোটারকে তাদের জাতীয়তা এবং পরিচয় যাচাই করতে হবে। এই প্রক্রিয়া বর্তমানে বিহারে শুরু হয়েছে এবং শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গসহ সারা ভারতে কার্যকর হবে।

এই পোস্টে আমরা ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশনের উদ্দেশ্য, প্রয়োজনীয় নথি, যোগ্যতার মানদণ্ড, এবং ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এটি সাধারণ মানুষের জন্য সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই এই প্রক্রিয়া সহজে বুঝতে পারেন।

Table of Contents

ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন কী?

ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে ভোটার তালিকায় থাকা প্রত্যেক ব্যক্তির পরিচয় এবং জাতীয়তা যাচাই করা হয়। ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI) এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে চায় যে ভোটার তালিকায় শুধুমাত্র যোগ্য ভারতীয় নাগরিকরা থাকবেন। এই প্রক্রিয়াটি স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (Special Intensive Revision) নামে পরিচিত, যা 2003 সালের পর প্রথমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে অযোগ্য ভোটার, বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসীদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।

ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশনের উদ্দেশ্য

ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশনের মূল উদ্দেশ্যগুলি হলো:

  • ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিশ্চিত করা: তালিকায় শুধুমাত্র যোগ্য ভারতীয় নাগরিকদের নাম থাকবে।
  • অবৈধ অভিবাসীদের বাদ দেওয়া: যারা ভারতীয় নাগরিক নন, তাদের ভোটার তালিকা থেকে অপসারণ করা।
  • নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা: ভোটার তালিকার মাধ্যমে নির্বাচনকে আরও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা।
  • জালিয়াতি রোধ: ভুয়া পরিচয় বা নথি ব্যবহার করে ভোট দেওয়ার প্রচেষ্টা বন্ধ করা।
  • আধুনিকীকরণ: ডিজিটাল এবং অফলাইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকাকে আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য করা।

Helpful Summary of Voter Card Verification

বিষয়বিবরণ
প্রক্রিয়ার নামSpecial Intensive Revision (SIR)
উদ্দেশ্যঅযোগ্য ভোটার বাদ দিয়ে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করা
শুরু হয়েছেবিহার (পাইলট প্রজেক্ট), শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যে
যোগ্যতার তারিখ1 জুলাই, 2025 (বিহারের জন্য)
প্রয়োজনীয় নথিজন্ম সনদ, আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি
প্রক্রিয়ার ধরনঅফলাইন ফর্ম পূরণ, বুথ লেভেল অফিসার (BLO) দ্বারা সংগ্রহ
যাচাইকারীইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO), প্রয়োজনে ফিল্ড ইনকোয়ারি
আপিলের সুযোগরাজনৈতিক দল এবং বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA) আপত্তি জানাতে পারেন

ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশনের যোগ্যতার মানদণ্ড

ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশনের জন্য নিম্নলিখিত শর্ত পূরণ করতে হবে:

  • ভারতীয় নাগরিকত্ব: আবেদনকারীকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
  • বয়স: 1 জুলাই, 2025 এর মধ্যে বয়স 18 বছর বা তার বেশি হতে হবে।
  • বৈধ ভোটার আইডি: আবেদনকারীর নাম বর্তমান ভোটার তালিকায় থাকতে হবে।
  • ঠিকানার প্রমাণ: আবেদনকারীকে স্থানীয় এলাকায় বসবাসের প্রমাণ দিতে হবে।
  • জন্ম তারিখের প্রমাণ: জন্ম তারিখ যাচাইয়ের জন্য বৈধ নথি প্রয়োজন।

ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীয় নথি

ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশনের জন্য নিম্নলিখিত নথিগুলি জমা দিতে হবে:

  1. সরকারি চাকরি বা পেনশনের পরিচয়পত্র
  2. 01.07.1987-এর আগে ইস্যু করা কোনো সরকারি ডকুমেন্ট
  3. জন্ম সনদ
  4. পাসপোর্ট
  5. মাধ্যমিক বা উচ্চশিক্ষার সনদ
  6. স্থায়ী বাসিন্দার সার্টিফিকেট
  7. ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট
  8. জাতিগত শংসাপত্র (SC/ST/OBC)
  9. NRC কপি (যদি থাকে)
  10. পরিবার রেজিস্টার
  11. সরকারি জমি বরাদ্দের প্রমাণ

সমস্ত নথি সত্যায়িত হতে হবে। সত্যায়ন করতে পারবেন:

  • সংসদ সদস্য
  • স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি
  • গেজেটেড সরকারি কর্মকর্তা
  • মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান

ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশনের সুবিধা

  • নির্ভুল ভোটার তালিকা: শুধুমাত্র যোগ্য ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।
  • নির্বাচনী স্বচ্ছতা: জালিয়াতি কমে নির্বাচন আরও সুষ্ঠু হবে।
  • অবৈধ অভিবাসীদের প্রতিরোধ: ভোটার তালিকা থেকে অযোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হবে।
  • আইনি সুরক্ষা: ভোটারদের পরিচয় সুরক্ষিত থাকবে।
  • ডিজিটাল সুবিধা: অনলাইন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আবেদনের অবস্থা জানা যাবে।

ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন কি ভাবে করবেন?

আপনারা এখন ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া (Voter Card Verification Process) সম্পন্ন করতে পারেন দুইভাবে — অনলাইন এবং অফলাইনের মাধ্যমে।
নিচে আমরা সহজ ভাষায় দুটি পদ্ধতির ধাপে ধাপে আলোচনা করছি, যেন আপনি নিজের সুবিধামত যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।

অফলাইনে ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন করার পদ্ধতি

নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি ঘরে বসেই অফলাইনে আপনার ভোটার আইডি কার্ড যাচাইকরণ (verification) করতে পারবেন। প্রতিটি ধাপ খুব সহজ ভাষায় দেওয়া হলো:

  1. ফর্ম সংগ্রহ:
    • আপনার এলাকার বুথ লেভেল অফিসার (BLO) বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিতরণ করবেন।
    • অথবা, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট (voters.eci.gov.in) থেকে ফর্ম ডাউনলোড করুন।
  2. ফর্ম পূরণ:
    • ফর্মে নাম, ভোটার আইডি নম্বর, ঠিকানা, জন্ম তারিখ এবং অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।
    • নিশ্চিত করুন যে তথ্যগুলি আপনার নথির সাথে মিলে।
  3. নথি সংযুক্ত করা:
    • প্রয়োজনীয় নথির সত্যায়িত কপি ফর্মের সাথে সংযুক্ত করুন।
    • নথিগুলি পরিষ্কার এবং পঠনযোগ্য হতে হবে।
  4. ফর্ম জমা দেওয়া:
    • ফর্ম এবং নথি আপনার এলাকার BLO-র কাছে জমা দিন।
    • অথবা, স্থানীয় নির্বাচন অফিসে সরাসরি জমা দিন।
  5. যাচাই প্রক্রিয়া:
    • ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO) আপনার আবেদন যাচাই করবেন।
    • প্রয়োজনে ফিল্ড ইনকোয়ারি পরিচালনা করা হবে।
  6. আবেদনের অবস্থা ট্র্যাক করা:
    • নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে রেফারেন্স নম্বর ব্যবহার করে আবেদনের অবস্থা দেখুন।
  7. আপিলের সুযোগ:
    • যদি আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়, তবে আপনি ERO-র কাছে আপিল করতে পারেন।

অনলাইনে ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন করার পদ্ধতি

নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে আপনার ভোটার আইডি কার্ড যাচাইকরণ (Voter Card Verification) করতে পারবেন। প্রতিটি ধাপ খুব সহজ ভাষায় দেওয়া হলো:

  • Step 1: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান
    • প্রথমে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে যেকোনো ব্রাউজার খুলুন।
    • 👉 তারপর এই লিঙ্কে যান: https://voters.eci.gov.in
  • Step 2: Enumeration Form Section-এ যান
    • হোমপেজে গিয়ে “Enumeration Forms” বা “Forms” মেনু খুঁজে নিন।
    • 🔸 সেখানে ক্লিক করুন “Fill Online” অপশনে।
  • Step 3: মোবাইল নম্বর বা EPIC নম্বর দিয়ে লগইন করুন
    • একটি নতুন পেজ খুলবে, যেখানে আপনাকে মোবাইল নম্বর বা EPIC নম্বর (ভোটার কার্ড নম্বর) দিতে হবে।
      👉 তারপর ক্লিক করুন “Request OTP”
  • Step 4: OTP যাচাই করুন (Verify OTP)
    • আপনার মোবাইলে একটি ৬-সংখ্যার OTP আসবে।
      🔹 সেটি নির্দিষ্ট ঘরে টাইপ করে “Verify OTP” বাটনে ক্লিক করুন।
      ✔️ OTP সফল হলে আপনি আবেদন ফর্মের পেজে চলে যাবেন।
  • Step 5: আবেদন ফর্ম পূরণ করুন
    • এখন আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সতর্কভাবে পূরণ করুন:
      • ✔️ নাম (বাংলা ও ইংরেজিতে)
      • ✔️ লিঙ্গ (পুরুষ / মহিলা / অন্যান্য)
      • ✔️ জন্ম তারিখ ও বর্তমান বয়স
      • ✔️ বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা
      • ✔️ বাবা/মা/স্বামী/স্ত্রীর নাম
      • ✔️ পূর্ববর্তী EPIC নম্বর (যদি থাকে)
      • ✔️ জাতিগত পরিচয় (General / SC / ST / OBC)
      • ✔️ শিক্ষাগত যোগ্যতা
    • 🟠 বিশেষ সতর্কতা: প্রতিটি ঘর খুব সাবধানে ও সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করুন।
  • Step 6: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন
    • আপনার ভোটার আইডি যাচাইকরণের জন্য নিচের প্রমাণপত্রগুলির মধ্যে যেগুলি প্রযোজ্য সেগুলি স্ক্যান করে PDF বা JPEG ফরম্যাটে আপলোড করুন:
  • Step 7: আবেদন সাবমিট করুন
    • 📋 সব তথ্য একবার যাচাই করে নিশ্চিত হন, তারপর “Submit” বাটনে ক্লিক করুন।
    • ⏩ সফলভাবে সাবমিট হলে স্ক্রিনে একটি Application Number দেখাবে।
  • Step 8: Application Number সংরক্ষণ করুন
    • এই Application Number ভবিষ্যতে আপনার আবেদন স্ট্যাটাস চেক করতে কাজে লাগবে।
    • 📸 একটি স্ক্রিনশট নিন অথবা কোথাও লিখে রাখুন।

ভোটার আইডি কার্ড অনলাইন বনাম অফলাইন আবেদন (২০২5)

বিষয়অনলাইন আবেদনঅফলাইন আবেদন
✅ সুবিধাঘরে বসে আবেদন করা যায়ফিজিক্যালভাবে ফর্ম সংগ্রহ ও জমা দিতে হয়
🌐 কোথায় আবেদন করবেনhttps://voters.eci.gov.in/BLO অফিস/বুথ অফিস থেকে ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে
📝 প্রয়োজনীয় ফর্মফর্ম 6 (নতুন ভোটার)ফর্ম 6 (BLO বা CEO অফিস থেকে নিতে হয়)
📤 কিভাবে জমা দিবেনঅনলাইনে স্ক্যান করে আপলোডহাতে হাতে জমা দিতে হয় BLO-র কাছে
⏳ প্রক্রিয়ার সময়সাধারণত 15–30 দিন30–45 দিন পর্যন্ত লাগতে পারে
📲 ট্র্যাকিং সুবিধাঅনলাইনে আবেদন স্ট্যাটাস ট্র্যাক করা যায়সাধারণত ফোনে বা অফিসে গিয়ে জানতে হয়
🧾 নথিপত্র আপলোডঅনলাইনে স্ক্যান কপি দিতে হয়ফিজিক্যাল কপি জমা দিতে হয়
📍 কোথায় আবেদন করতে হবেনিজের এলাকা বাছাই করে NVSP বা Voter Portalনিজ এলাকার BLO বা ERO অফিসে

যোগাযোগের তথ্য

  • নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট: voters.eci.gov.in
  • টোল-ফ্রি নম্বর: 1950
  • পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নির্বাচনী অফিসার: ceowestbengal.nic.in
  • স্থানীয় নির্বাচন অফিস: আপনার এলাকার উপজেলা বা জেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করুন।
  • বুথ লেভেল অফিসার (BLO): আপনার এলাকার BLO-র সাথে যোগাযোগ করতে স্থানীয় নির্বাচন অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন কবে থেকে শুরু হবে?

অনুমান করা হচ্ছে 2025 সালের শেষ নাগাদ বা 2026-এর নির্বাচনের আগে শুরু হবে।

যদি আমি যাচাই না করি, তাহলে কী হবে?

আপনার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে।

আমার জন্ম ভারতেই, কিন্তু জন্মসনদ নেই। আমি কী জমা দেব?

স্কুল সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, বা অন্যান্য সরকারি কাগজ দেওয়া যেতে পারে।

ফর্ম কোথায় পাব?

আপনার এলাকার BLO ফর্ম বিতরণ করবেন। এছাড়া, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে পারেন।

উপসংহার

ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্য করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিহারে শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়া শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যান্য রাজ্যে কার্যকর হবে। প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত রাখুন এবং আপনার এলাকার বুথ লেভেল অফিসারের সাথে যোগাযোগ রাখুন। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে আপনি ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবেন। সময়মতো আপনার ভোটার কার্ড যাচাই করুন এবং একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা গঠনে অবদান রাখুন!

Leave a comment